কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৫। ৬ টি সহজ উপায়

স্বপ্নের দেশ কানাডা! উন্নত জীবনযাপন, চাকরি এবং পড়ালেখার জন্য কানাডা একটি জনপ্রিয় দেশ। জীবন মান উন্নয়নের দিক দিয়ে কানাডা শীর্ষ  তিনে রয়েছে। সারা বিশ্ব  থেকে প্রায় গড়ে বছরে তিন থেকে চার লক্ষ মানুষ কানাডার অধিবাসী হন। তাই  অভিবাসী প্রত্যাশীদের জন্য কানাডা প্রথম পছন্দ।‌


কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৫


প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন রকম মানুষ এবং অভিবাসীরাও কানাডিয়ান গভর্ণমেন্টের দেয়া ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদেশের স্থায়ী হতে চায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া কানাডা এসেছে ২৭০০ মানুষ। এছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছেন ৩৮০০ student। যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কম।

অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডা অভিবাসন সহজ। এদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার এখানকার বসবাসকারী মানুষজন সুখী ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে। 

বর্তমানে দেশটিতে মোট ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। যা আয়তনের তুলনায় অনেক কম। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সর্বশেষ(২০২২) তথ্য অনুযায়ী কানাডায় বর্তমান মাথাপিছু আয় ৫৫ হাজার ৫২২ ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা! এবং সর্বমোট জিডিপি প্রায় ২.১৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় 95% অভিবাসী।আর বাকি ৫% মানুষ ফার্স্ট নেশন। তাই পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত  দেশ থেকেও বিভিন্ন মানুষ কানাডায় স্থায়ী অভিবাসন নিতে চায়।

তাই আমরা আজকের পোস্টে আলোচনা করব আপনি কিভাবে  বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যেতে পারবেন এবং কি কি উপায়ে যেতে পারবেন কি রকম খরচ হতে পারে এরকম বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

কানাডা যাওয়ার উপায়

আপনারা হয়তো সকলের অবগত আছেন কানাডা ইতিমধ্যেই ২০২৩  থেকে ২৫ সালের মধ্যে ইমিগ্রেশন লেভেল প্লান প্রকাশ করেছে। এই প্লান অনুসারে ২০২৩ সালে সর্বমোট চার লক্ষ ৬৫ হাজার নতুন ইমিগ্রানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যা পরবর্তীতে ২০২৪ দাঁড়াবে চার লক্ষ  ২৫ হাজার জন।এবং ২০২৫ প্রায় ৫ লক্ষ ইমিগ্রেট কানাডায় যেতে পারবেন।

এই প্ল্যানের আওতায় এক্সপ্রেস এন্ট্রি তে ২০২৩ সালে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৮২ হাজার ইমিগ্রান্টকে। ২০২৪ সালের প্লান রয়েছে এক লক্ষ ৯ হাজার নতুন ইমিগ্রান্ট কে নেওয়ার। এবং পরবর্তীদের ২০২৫ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াবে এক লক্ষ ১৪ হাজারে। 

 

১.পিএনপি পদ্ধতিতে কানাডায় যওয়ার উপায়

এই পদ্ধতিতে ২০২৩ সালে প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার ইমিগ্রেট কানাডায় গিয়েছে। এবং ২০২৪ সালে  এক লক্ষ ১৫ হাজার ইমিগ্রেট কানাডায় যেতে পারবে। পরবর্তী ২০২৫ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ১৭ হাজারে।

তবে বলে রাখা ভালো উপরের যেই দুইটি পরিসংখ্যান আমি তুলে ধরেছি এটি শুধু এক্সপ্রেস এন্ট্রি পিএনপি’র জন্য। যারা ভিজিট ভিসা তে এসে ভুয়া রিফিউজি ক্লইম করে কানাডায় স্থায়ী হতে চাচ্ছেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল ২৪ এবং ২৫ সালের কানাডা সরকার রিফিউজি নেওয়ার টার্গেট অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।

২.এক্সপ্রেস এন্ট্রি

প্রথম প্রক্রিয়াটি হল  Federal skill worker problem. যাকে আমরা এক্সপ্রেস এন্ট্রি হিসেবেও জানি। এ প্রক্রিয়ায় কানাডায় যেতে হলে আপনার প্রথমে যে দক্ষতাটি লাগবে সেটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কোন কাজের অভিজ্ঞতা। এছাড়াও আপনার ভাষাগত দক্ষতাও থাকতে হবে। সেটি হতে পারে অথবা ইংরেজ অথবা ফ্রান্সে। এর পাশাপাশি  থাকতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা যা আপনাকে কানাডিয়ান স্টান্ডে প্রমাণ করতে হবে। এছাড়াও এ প্রক্রিয়ায় কানাডায় স্থায়ী হওয়ার জন্য আপনার অর্থনৈতিক সামর্থ্যও থাকতে হবে।

 

৩.ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

এরপরে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে  কানাডায় স্থায়ী হতে পারবেন সেটা হচ্ছে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা একটু জটিল হওয়ার কারণে এখানে বেশ প্রতারণা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার নাম করে বিভিন্ন দালাল চক্র সাধারণ জনগণ্যের কাছ থেকে অনেক অর্থ আত্মসাৎ করতেছে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কারণে আসতে হলে আপনাকে ক্যানাডিয়ান ইমপ্লোরের কাছ থেকে LMI এপ্রুফ জব  অফার পেতে হবে। বন্ধুরা আপনারা সতর্ক থাকবেন বাংলাদেশ থেকে কোন এজেন্সি ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাউকে কানাডায় নিয়ে যেতে পারবে না।

 

৪.স্টুডেন্ট ভিসা


আপনি যদি এখন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন এবং কানাডায় যেতে চান। তাহলে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা আপানার জন্য। কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে আগে কানাডার নির্দিষ্ট কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। তারপর আপনি সেখানে লেখাপড়া করার জন্য কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে যেতে পারবেন।  

যদি কানাডিয়ান কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনি চান্স পেয়ে থাকেন বা ভর্তি হতে পারেন তাহলে খুব সহজেই স্টুডেন্ট ভিসা পেয়ে যাবেন। স্টাডি পারমিট ভিসা নিয়ে যখন আপনি কানাডায় আসবেন তখন পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি রয়েছে।

পড়ালেখা শেষ করার পরে আপনি  এখানে একটি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা  নিতে পারবেন এবং সকল শর্ত পূরণ করতে পারলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর PR বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পেয়ে যাবেন।

 

৫.ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সারশিপ

কানাডা যাওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে  একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ। পরিবারের সদস্যের আমন্ত্রণে আপনি খুব সহজে কানাডায় গিয়ে স্থায়ী বসবাস করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী কে অবশ্যই কানাডার স্থায়ী আধিবাসি অথবা কানাডিয়ান নাগরিক হতে হবে। এবং যাকে আমন্ত্রণ করবে সে স্বামী অথবা স্ত্রী, এবং ২২ বছরের কম বয়সী সন্তান হতে হবে। এক্ষেত্রে বাবা-মা অথবা দাদা-দাদীকে সুপার ভিসা ক্যাটাগরির আওতায় নিয়ে যেতে পারবেন।

এছাড়াও কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার আরেকটি সহজ মাধ্যম হলো কানাডার স্থায়ী নাগরিকদের বিয়ে করা। তবে আপনি যদি কোন অনিয়মের আশ্রয় নেন সে ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন শাস্তি সম্মুখীন হতে হবে। কানাডিয়ান নাগরিক বিয়ে করে সেখানে স্থায়ী হতে চাইলে আপনাকে দুই বছর সময় লাগবে। এই দুই বছর সরকারি কর্তৃপক্ষ তাকে পর্যবেক্ষণ করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং তারা যদি কোন অনিয়ম দেখতে না পায় তাহলে কানাডার যাওয়ার অনুমতি পাবেন। 

 

৬.টুরিস্ট ভিসা

টুরিস্ট ভিসায় কানাডায় যাওয়া সবচেয়ে সহজ। কিন্তু টুরিস্ট ভিসায় আপনি কানাডা স্থায়ী হতে পারবেন না। কারণ  এটি একটি ভ্রমণ ভিসা। এই ভিসায় আপনি কানাডায় শুধু ঘুরতে যেতে পারবেন। এবং সেটি নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য। টুরিস্ট ভিসায় কানাডায় য়াওয়া যেমন সহজ ,তেমনি কঠিন হচ্ছে টুরিস্ট ভিসা পাওয়া। 

যেই দূতাবাসে আপনি কানাডা টুরিস্ট ভিসা নিবেন সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা যে আপনার সাক্ষাৎকার নেবে উনার যদি মনে হয় যে আপনি কানাডা যাওয়ার পর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আপনার না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে। তাহলে আপনি টুরিস্ট ভিসা নাও পেতে পারেন। তাই আপনাকে অবশ্যই স্বচ্ছ থাকতে হবে।

বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ কানাডা স্থায়ী হওয়ার জন্য  যে সকল বৈধ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করলাম আমাদের প্রথমেই জানতে হবে আমরা এগুলোর জন্য প্রস্তুত কিনা। প্রস্তুতি ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমে ভাষাগত দক্ষতা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য আমাদের ILTS ভালো স্কোর করতে হবে।শিক্ষাগত যোগ্যতা ভ্রমণের জন্য আমাদের ECA করতে হবে। এর সাথে সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।


উপসংহারঃ

কানাডা যেতে চাইলে আমাদের শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, তার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং বৈধ পন্থা অনুসরণ। ভুল তথ্য বা দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভাষাগত দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থিক সামর্থ্য যাচাই করে পরিকল্পনা করলে কানাডায় স্থায়ী হওয়া আর স্বপ্ন থাকবে না – সেটি হবে বাস্তব। তাই আগেই প্রস্তুতি নিন, তথ্য যাচাই করুন, তারপর আপনার কানাডা যাত্রা শুরু করুন।



0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post